I/1,Green Housing Society,Abdul Hannan Road,Khulshi,Chittagong

একটি পরিবার নষ্ট করতে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিই যথেষ্ট

একটি পরিবার নষ্ট করতে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিই যথেষ্ট

মাদক সম্পর্কে জানেন না বিশ্বের এমন কি কেউ আছে? মাদকের ভয়াবহতা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের সর্বাত্মক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে।মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে বস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরে আমরা মাদকমুক্ত একটি সমাজ প্রত্যাশা করি। আশার কথা এই যে বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেছেন এবং সব বাহিনী মাদক নিমূর্লে একসঙ্গে কাজ করছে

কেন এই আসক্তি? মানুষকে মাদকাসক্তির দিকে পরিচালিত করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা। তবে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।
দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদিও মাদকের সমস্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ, ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবার, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশার কারণেও মাদকাসক্তের হার বাড়ছে। বেশির ভাগ মাদক ব্যবহারকারী ‘পিয়ার প্রেশার’ বা বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়াকে প্রধান ‘পুল ফ্যাক্টর’ হিসেবে দোষারোপ করেছেন। প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণের জন্য কৌতূহল অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।

মাদকের ভয়াবহতা মাদকের হাতছানি সারা দেশে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করে একটি মানুষের শরীর, মন, জ্ঞানবিবেক ও তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার পরিবারের সব স্বপ্নকে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যেক। শুধু পরিবারকে নয়, মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করে একটি সমাজকে, একটি জাতিকে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি বৃহত্ আকার ধারণ করে একটি ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তরুণ তাজা প্রাণের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে সমাজ। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পথে, মাদক ঢুকে পড়ছে আমাদের সমাজে। আর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণসমাজের প্রতি।

মাদকদ্রব্য সেবনের ক্ষতিকর দিক একবার আসক্ত হয়ে পড়লে তাকে মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে পরিবারকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। একটি পরিবারে বা সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিই যথেষ্ট। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিকসহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। শারীরিক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে—মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া, হঠাৎ চোখে কম দেখা, মুখ ও নাক লাল হওয়া, যৌনশক্তি কমে যাওয়া, মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে কালশিরে পড়া, হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, বুক ও ফুসফুস নষ্ট হওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, চর্ম ও যৌন রোগ বৃদ্ধি পাওয়া, সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি, স্মৃতিশক্তির কোষ ধ্বংস করা। মাদক গ্রহণে শারীরিকভাবে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন—অনিয়মিত মাসিক, জরায়ুর বিভিন্ন প্রকার রোগ, নারীর প্রজননক্ষমতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন যৌনরোগ দেখা দেয়। সম্প্রতি মাদকাসক্তদের মধ্যে এইডস দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন চিকিসৎকরা। মানসিক ক্ষতির একটা বড় রূপ রয়েছে, যা সব সময় বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় যেমন—পাগলামি করা, মাথা ঘোরা ও খিটখিটে মেজাজ, অলসতা ও উদ্বেগ, হতাশাগ্রস্ত হওয়া, স্নেহ-ভালোবাসা কমে যাওয়া ইত্যাদি। মাদকাসক্তির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে। কারণ যে পরিবারে মাদকাসক্ত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সে পরিবারে কোনো সুখ-শান্তি থাকে না। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের অলংকার ও টাকা-পয়সা চুরি করে আর সেটা না পারলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে জোর করে অস্ত্র দেখিয়ে অর্থ নিয়ে তার চাহিদা মেটায়। সমাজে চলে চরম বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। বর্তমানে দেশের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার ও সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে




1 comment:

Powered by Blogger.