ম্যাজিক মাশরুম: অপ্রচলিত এই মাদক কী, এটি দেহে কী প্রভাব সৃষ্টি করে, কী ক্ষতি
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হাতির ঝিল এলাকা থেকে 'ম্যাজিক মাশরুম' নামে এক ধরনের মাদকসহ দুই জনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব (৭ই জুলাই-২০২১)
ম্যাজিক মাশরুম: অপ্রচলিত এই মাদক কী, এটি দেহে কী প্রভাব সৃষ্টি করে, কী ক্ষতি
মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে বহু আগে থেকেই ম্যাজিক মাশরুমের ব্যবহার হতো।শুরুর দিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা রীতিনীতি, যার সঙ্গে কোনও ধরনের ত্যাগ (স্যাক্রিফাইস) কিংবা ধ্যান জড়িত থাকে, সে ধরনের অনুষ্ঠানে মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য ম্যাজিক মাশরুমের ব্যবহার ছিল।মাদক সেবনের পর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর এর কার্যকারিতা শুরু হয়, যা প্রায় পরবর্তী ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলে।এটি সেবনের পর ব্যবহারকারীরা এক ধরনের ইউফোরিয়া বা অলীক কল্পনার জগতে চলে যায়। এটি আসলে মাইন্ড অল্টারিং এবং দৃষ্টি বিভ্রম ঘটায়।
শরীরে ম্যাজিক মাশরুম বা সাইলোসাইবিনের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন। ১৯৯৩ জন ব্যক্তি, যাদের বয়স গড়ে ৩০ বছর, তাদের উপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছিল। তাদের সবার কাছে সাইলোসাইবিন মাশরুম গ্রহণের পর কী ধরণের অভিজ্ঞতা হয় তা জানতে চাওয়া হয়।এদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ ব্যক্তি এই মাদক গ্রহণের পর খুব খারাপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। ১১ শতাংশ ব্যক্তি নিজেদের কোন না কোন শারীরিক ক্ষতি করেছেন। ২.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সহিংস আচরণ করেছেন। আর ২.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর চিকিৎসা সেবা নেয়ার দরকার হয়েছিল বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ.ব.ম ফারুক বলেন, এ ধরণের মাদক ব্যবহারের কারণে একজন ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক-দুই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।এই মাদকের প্রভাবের সাথে অন্য আরেকটি মাদক, যা এলএসডি নামে পরিচিত সেটির মিল রয়েছে।এলএসডির মতোই এই মাদক গ্রহণেও সেবনকারীর হ্যালুসিনেশন হয়। অর্থাৎ তার সামনে এমন সব অলীক বিষয় জাগে বা তিনি দেখতে পান, যা আসলে বাস্তবে সম্ভব নয়।এই মাদক দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে সেটি দেহের স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে ব্যবহারকারীর ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে।এছাড়া ক্ষুধামন্দা, স্মৃতিভ্রম, পায়খানা-প্রস্রাব ঠিক মতো না হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেবে।ম্যাজিক মাশরুম ধরনের মাদক দেহের এনডোক্রাইন সিস্টেম বা শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলবে। এর কারণে দেহে হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা হরমোন নিঃসরণের প্যাটার্ন বা ধরন বদলে যেতে পারে, যা দেহের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।এটি দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহারের কারণে প্যানিক রিঅ্যাকশন তৈরি হয়, ব্যবহারকারীর মধ্যে সময়, জায়গা বা অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লোপ পায়।এছাড়া পেশীব্যথা, শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা, পেশী দুর্বল হয়ে থাকা, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
No comments